সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজার অনুষ্ঠান। সারাদেশের ন্যায় তাড়াশ উপজেলায় শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির প্রস্তুতি। কাঁদামাটি, খড়, বাঁশ, কাঠ আর রং দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। নিখুত ভাবে মনের মাধরী মিশিয়ে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দূর্গা দেবীকে। পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে তৈরি করা হচ্ছে দূর্গা, সরস্বতী, লক্ষèী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও শিবের মূর্তি।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, তাড়াশের ইউনিয়নের তাড়াশে, দোবিলায় বোঁথর ও পৌর সদরের পুজা পন্ডবে মহল্লাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু প্রতিমা শিল্পী, প্রতিমা তৈরী করেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৩ টি মন্ডপে দূর্গা পূজা কম হচ্ছে।
বেলগাছি গ্রামের প্রতিমা শিল্পী অমল পাল জানান, বেলগাছি গ্রামের চারটি পরিবার প্রতিমা তৈরীর কাজ করেন। দূর্গা, স্বরস্বতী, কালী, লক্ষী, মনসা, শিব ঠাকুর, বিশ^কর্মা, গনেশসহ বিভিন্ন প্রতিমা তৈরী করেন তারা। যখন যেটা অর্ডার পান তখন সেটি তৈরী করে সরবরাহ করেন।
তবে বর্তমান সময়ে দূর্গা পূজা আসন্ন হওয়ায় দূর্গা প্রতিমা তৈরীতেই ব্যস্ত তারা। এ বছর তিনি ৩২ টি দূর্গা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। কাঠামো তৈরী করে তাতে মাটি লাগানোর কাজ শেষ করে রং এর কাজ করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতিমা তৈরীর উপকরণ খড়, বাঁশ, সুতলী, লোহা, রঙ, মাটি, ধানের তুষ, কাপড়সহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। আকার ভেদে এক একটি প্রতিমা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। তাড়াশে ছাড়াও নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা কিনে নিয়ে যান। খুব বেশি লাভ করতে না পারলেও এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে কোন রকমে দিনাতিপাত করছেন তারা।
অপূর্ব পাল জানান, এ বছর ১২ টি দূর্গা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে কাঠামো তৈরীর কাজ শেষ করেছেন। সনাতন পাল নামক অপর প্রতিমা শিল্পী ১০ টি দূর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। তারা জানান, এঁটেল মাটি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পরেছে। আগে মাটি কিনতে হতো না। এখন চড়া দামে মাটি কিনতে হয়। অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় তারা লাভ করতে পারছেন না। আবার পৈত্রিক পেশা ছাড়তেও পারছেন না। সব মিলিয়ে কোন রকমে টিকে আছেন তারা। বোঁথর গ্রামের প্রতিমা শিল্পী সত্যেন চক্রবর্ত্তী জানান, এ বছর ১২ টি দূর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু করেছেন তিনি। কাঠামো তৈরীর কাজ শেষ করে এখন রং এর কাজ করছেন।
আশা করছেন পূজার আগেই সবগুলো সরবরাহ করতে পারবেন। তিনি আরো জানান, তাড়াশে প্রায় ৩৫ জন প্রতিমা শিল্পী শতাধিক দূর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্ত্তী জানান, এ বছর ৩০ টি মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির গুলোতে দূর্গা পূজা পালনের প্রস্ততি গ্রহন করা হচ্ছে। নির্বিঘেœ পূজা উদযাপনে তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে পূজা উদযাপিত হয় সে জন্যসব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে থানা পিিলশ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নিরাপত্তায় প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ মেজবাউল বলেন, সরকারী নির্দেশনা মেনে ও আনন্দমুখর পরিবেশে দূর্গা উদযাপন করতে মন্ডপ কমিটি, থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে ও সংশ্লিষ্টদের সর্বদা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।